জেনে নিন স্ট্রোক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য--( Dr. Khaleda Jahan Jenny)




 মিসেস যারা তাসনিম তার  একমাত্র ছেলের বার্থডে পার্টিতে হঠাৎ করে পা ফসকে পড়ে যান উপস্থিত সবাই ভাবলেন এটা ব্যস্ততা বা অন্য মনষ্ক থাকার কারণে অথবা হাই হিল পরার কারণে পড়ে গিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল সে ভালো করে কথা বলতে পারছে না। কথা কিছুটা অস্পষ্ট। এবং তার ডান বাহুটি তে দুর্বল অনুভব করছিলেন। কিন্তু বাসায় অনেক গেস্ট থাকার কারণে  কোন কিছু সে বাইরে প্রকাশ করলেন না  বা কাউকে কিছু বললেন না। কিন্তু মাঝরাতে দেখা গেল বিপত্তি তীব্র মাথাব্যথা এবং বমি ভাবের জন্য সে শয্যাশায়ী  হয়ে গেল। হাজবেন্ড যথেষ্ট কেয়ারিং ছিলেন তিনি খুব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। কিন্তু উনি যে অসুস্থ সে কথাটি উনি তো ভিতরে চেপে গিয়েছিলেন যার কারণে ওনার হাজব্যান্ড সঠিক সময়ে বিষয়টি জানতে পারেননি। রাস্তায় বৃষ্টি থাকার কারণে গাড়ি পেতে একটু সময়ে লেগে গিয়েছিল ।দ্রুত হসপিটালে যাওয়ার চেষ্টা করলেও যেতে যেতে মাঝ রাস্তায় যা সর্বনাশ ঘটার তাই ঘটে গেল। ডাক্তার পর্যবেক্ষণ করে বললেন পেশেন্ট কয়েক ঘণ্টা স্ট্রোক করেছিল সঠিক টাইমে সাথে সাথে হসপিটালাইজড করলে হয়তো বাঁচানো যেত।

এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের আশেপাশে প্রায় ই ঘটে থাকে।

আপনাদেরকে সচেতন করার লক্ষ্যে ই আমার আজকের আলোচনা। আমি আজকে স্ট্রোক বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে......

স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ -


হটাৎ শরীরের যে কোন এক পাশ অবশ বা দূর্বল হয়ে যাওয়া।
তীব্র মাথা ব্যথা ও বমি।
হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা হাঁটা চলার সময় হঠাৎ পরে যাওয়া।
কথা জড়িয়ে যাওয়া, কথা বলতে না পারা।



রোগী স্ট্রোক আক্রান্ত কিনা তা বোঝার উপায় :


রোগীকে দাঁত বের করে হাসতে বলবেন, দেখবেন মুখের কোন পাশ অবশ বা ঝুলে পড়ে কিনা।
দুই হাত সোজা মাথার উপরে উঠাতে বলবেন, দেখবেন পারে কিনা।
পুরো একটি বাক্য বলতে বলবেন, দেখবেন স্পস্ট শুনে একই কথা আবার বলতে পারে কিনা।
এই ৩টি বিষয় যেকোনো একটিও উপস্থিত থাকলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের শরণাপন্ন 


ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ্যই মাথার একটা সিটি স্ক্যান করাবেন।

স্ট্রোক করলে রোগীকে না জেনেই নিজে থেকে রোগীকে কোন প্রকার প্রেশারের ওষুধ বা অন্য কোন কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। এমনকি পানিও না। কারণ, স্ট্রোকের রোগীর মুখের মাংসপেশীগুলো প্যারালাইজড অবস্থায় থাকে। ওই রোগীকে যদি কিছু জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয় তাহলে সেটা খাদ্যনালীর পরিবর্তে শ্বাসনালীতে চলে যেতে পারে। আর একবার যদি খাবার শ্বাসনালীতে যায় তাহলে বেশীরভাগ সময়ই মৃত্যু অবধারিত।




স্ট্রোক প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোলে রাখবেন।
নিয়মিত হাঁটাচলা করবেন।
সাদা ভাত, সাদা চিনি, সাদা লবণ খাওয়ার অভ্যাস একেবারে বাদ দিতে হবে।
সিগারেটের ধোয়া থেকে দূরে থাকবেন।
ডায়াবেটিস বা অন্য কোন রোগ থাকলে কন্ট্রোলে রাখবেন।
নিয়মিতভাবে কোলেস্ট্রেরল লেভেল চেক করাবেন।
তীব্র মাথাব্যথা বা হটাৎ করে চোখে ঝাপসা দেখলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যাবেন।

স্ট্রোক সতর্কতা

স্ট্রোক সাধারণত বাথরুমে হয়ে থাকে কারণ, বাথরুমে ঢুকে গোসলের সময় আমরা প্রথমেই মাথা এবং চুল ভেজাই যা একদম উচিৎ নয়। এটি ভুল পদ্ধতি। এভাবে প্রথমেই মাথায় পানি দিলে রক্ত দ্রুত মাথায় উঠে যায় এবং কৈশিক নালী ও ধমনী একসাথে ছিড়ে যেতে পারে। ফলস্বরুপ ঘটে স্ট্রোক এবং মাটিতে পড়ে যাওয়া।





চিকিৎসকদের মতে গোসলের সময় কিছু নিয়ম মেনে গোসল করা উচিত।  সেটা আমরা অনেক সময় মনে রাখি না।গোসল করার সময় প্রথমেই মাথা এবং চুল ভেজানো একদম অনুচিত।। কারণ, আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালন একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় হয়ে থাকে। আর এই শরীরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার সাথে adjust বা মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। চিকিৎসকদের মতে, মাথায় প্রথমেই যদি পানি দেয়া হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত সঞ্চালনের গতি বহুগুনে বেড়ে গিয়ে থাকে। ফলে বেড়ে যেতে পারে স্ট্রোকের ঝুঁকিও। তা ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত রক্তচাপের ফলে মস্তিষ্কের ধমনী ছিড়ে যেতে পারে।

স্ট্রোক সতর্কতায় গোসলের সঠিক নিয়ম
মুসলমান হিসেবে আমাদের অবশ্যই দায়িত্ব গোসলের আগে ওযু করে নেয়া।

প্রথমে পায়ের পাতা ভেজাতে হবে।

এরপর আস্তে আস্তে উপর দিকে কাঁধ পর্যন্ত ভেজাতে হবে।
তারপর মুখে পানি দিতে হবে।
সবার শেষে মাথায় পানি দেয়া উচিত। 



 সর্বশেষ কথা হচ্ছে যে বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে যেন তিনি আমাদেরকে সুস্থ রাখেন।
চর্বিযুক্ত খাবার এভোয়েড করুন অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবার অ্যাভয়েড করুন।
দোয়া করি মহান শক্তিমান আল্লাহতালা আমাদের সকলকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখুন আমিন

Dr. Khaleda Jahan Jenny
Bangladesh homoeopathic medical college and hospital Dhaka.

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ