"আমি আত্মহত্যা করতে চাই আমি মরে যেতে চাই।। আমি গলায় ফাঁসি দিয়ে মরে যাব"। ঠিক এই কথাগুলোই বলছিল একটি ১২ বছর বয়সের শিশু তার মাকে।
শিশুটির মা তার কান্না ভেজা গলায় আমাকে কথাগুলো বলছিল। শিশুটির মা যা বললেন আমাকে, তার মূল কথা হলো আমার ছেলেটি মাদ্রাসায় পড়ে বেশ অনেকদিন হয়ে গিয়েছে। তার রেজাল্ট খুব ভালো হয়। পড়াশোনায় খুব মনোযোগী ছিল ।কিন্তু জানিনা কেন কিছুদিন যাবত আমার বাচ্চাটা কিছুতেই মাদ্রাসায় যেতে চাচ্ছে না। কারণ জিজ্ঞেস করলে কেবলই বলতে থাকে আমার ভালো লাগেনা আমার ভালো লাগেনা আমি পড়বো না। আমি কিছুতেই মাদ্রাসায় যাব না।
মহিলাটি এ পর্যন্তই বলে কিছুক্ষণ থামল। তারপর আমাকে অনুনয় বিনয়ের সাথে বলল,
ম্যাডাম আপনি কিছু করেন, আমার ছেলেটাকে বুঝান। প্রয়োজনে মেডিসিন দেন। আমার ছেলেটার কি যেন একটা মানসিক সমস্যা হয়েছে সে কিছুতেই পড়তে চাচ্ছে না মাদ্রাসায় যেতে চাচ্ছে না তাকে অনেক শাসন করেছি মারধর করেছি কিন্তু কিছুতেই সে মাদ্রাসায় ফেরত যাবে না।
তারপর আমি ছেলেটাকে কাছে ডেকে নিয়ে শান্ত গলায় খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে কথা বললাম। ওকে বেশ অনেকটা সময় দিয়ে কাউন্সিলিং করলাম। আমি তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর সে মাদ্রাসায় যেতে রাজি হয়ে গেল। এবং আমাকে কথা দিল সে এখন থেকে ভালোভাবে পড়াশোনা করবে অনেক বড় মানুষ হবে।
আজকে আমি যে মায়ের গল্পটি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। এই ঘটনাগুলো আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটছে।
বাচ্চারা শুধুমাত্র আবাসিক প্রতিষ্ঠানে পড়তে চায় না তা কিন্তু নয়, অনাবাসিক স্কুল অথবা মাদ্রাসায়ও অনেক বাচ্চারা পড়তে চায় না পড়াশোনায় মনোযোগ কম। সে জন্য বাবা মায়ের চিন্তার কোন শেষ নেই। আর এই চিন্তার প্রভাব হিসেবে তারা সন্তানদের প্রতি শাসনের নামে অনেক সময় অমানুষিক অত্যাচার করে ফেলেন যা তাদের ছোট্ট মনে খুব ভয়াবহ প্রভাব পড়ে তখন সন্তানটি অবাধ্য বেয়ারা এবং বেয়াদব হয়ে যায়।
বর্তমানে Parents রা জানতে চায় না---
তার সন্তান কি চায় ?
কেন তাদের পড়াশোনায় আগ্রহ কমে যাচ্ছে?
স্কুল মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে আগ্রহ কমে যাচ্ছে? একবার সন্তানটিকে কাছে ডেকে নিন মমতার স্নেহে বুকে জড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করুন যে কেন সে মাদ্রাসায় বা স্কুলে যেতে চাচ্ছে না।
আপনারা এই সমস্যাগুলোর জন্য বাচ্চাদেরকে কাউন্সিলিং করাতে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। কিন্তু আপনারা যদি পরম স্নেহে তার সমস্যাগুলোর কথা নিজে থেকে জানতে চান নিজেরা এটা সমাধান করার চেষ্টা করেন। তাহলে সন্তানকে আর বিপথগামী হতে হয় না।
এক্ষেত্রে অভিভাবকদের কি করনীয়?
👉সন্তানদের সাথে আন্তরিকভাবে সময় কাটান।
👉তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন সে কেন পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনোযোগী এবং বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে?
👉 সে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহপাঠীদের দ্বারা অথবা শিক্ষকদের দ্বারা ইনসাল্ট অথবা বুলিং এর শিকার হচ্ছেনা তো?
অথবা শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে না তো?
👉 তার বয়সের তুলনায় তার পড়াশোনার চাপটা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে না তো?
👉 তার শরীরে ভিটামিন, আয়রন অথবা ক্যালোরির ঘাটতির কারনে তার শারীরিক দুর্বলতা অবসাদ তৈরি হচ্ছে না তো?
অথবা অপুষ্টিতে ভোগার কারণে তার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা অথবা স্মরণশক্তি কমে যাওয়া এই সমস্যা গুলোতে ভুগছে না তো?
এই বিষয়গুলো একটু বোঝার চেষ্টা করুন সন্তানকে বোঝার চেষ্টা করুন এবং সমস্যা অনুযায়ী সমাধানের চেষ্টা করুন।
আপনার সন্তান আপনার সম্পদ আপনার ভবিষ্যৎ।
প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডক্টরের কাউন্সিলিং গ্রহণ করুন।
সবাই সুস্থ এবং সুন্দর থাকুন,
নিজেকে, নিজের সন্তানকে , নিজের পরিবারকে ভালবাসুন। ভালো থাকুন।।
ধন্যবাদ 💝
Dr. Khaleda Jahan Jenny
Doctors Homeo Hall
Appointment: WhatsApp 01778137677
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন