সুস্থতা আল্লাহর নেয়ামত ।

 সুস্থতা আল্লাহর নেয়ামত

মহান আল্লাহর রহমতে যখন সুস্থ থাকি তখন আমরা আসলে বুঝতে পারি না যে আমরা কতটা নিয়ামত ভোগ করছি। কিন্তু যখনই আমরা একটু অসুস্থ হই যার কারণে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ব্যাহত বা ডিস্টার্ব বোধ করি, তখনই আমরা বুঝতে পারি যে সুস্থতা কত বড় আল্লাহর নেয়ামত। তাই সব সময় আমাদের উচিত অসুস্থ হবার আগে সুস্থ অবস্থায কে গুরুত্ব দিয়ে জীবন পরিচালনা করা।



মহান রাব্বুল পাক  আলামিন আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদত করার জন্য। কিন্তু আমরা সবাই দুনিয়াবী জীবনে ভোগ বিলাসী ভক্ত। বিলাসিতা মত্ত হয়েছে আমরা সবাই। আমাদেরকে আমাদের জীবনের প্রতিটা সময়ের প্রতিটা মুহূর্তে প্রতিটা ন্যানো সেকেন্ডের হিসাব দিতে হবে। আমরা কি সত্যিই সেভাবে সময় পার করছি যেভাবে আমাদের সময় পার করা দরকার। আমার প্রতি কেমন আছি হিসাব দিব সেটাকে একবার ভেবে দেখি??

 অমুসলিমরা তাদের ধর্ম , তাদের গ্রন্থ পাঠ করে রিসার্চ করে। এরপর আবার আমাদের ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন পাঠ করে রিসার্চ করে। অথচ আমরা শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের ধর্মের গ্রন্থটি রিসার্চ করার সময় পাইনা। রিসার্চ করা তো দূরের কথা শুধুমাত্র তেলাওয়াত করারও সময় পাইনা।

দুনিয়াবী জীবনে আমরা কোথাও যদি কেউ চাকরি করি তবে বসের মন রক্ষার্থে আমরা কতই না সাবধানে চলি। অথবা অথচ আমরা যার প্রকৃত দাস তাকে কতটা ভয় করি?

আধুনিক জীবনে আমরা একটা কথা খুব বেশি বলে থাকি জীবনটাকে উপভোগ করো। জীবন টা কি উপভোগ করার বিষয়।না , তা কিন্তু একদমই নয়। বরঞ্চ আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের প্রতিটা মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে মহান আল্লাহর কাছে। আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে শুরু করে আর্থিক সামাজিক ব্যক্তিগত সকল ক্ষেত্রে আমাদের বিধি-বিধান দেয়া আছে আল কুরআনের এবং আল হাদিসে।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেছিলেন তোমরা যদি আল কুরআন এবং হাদিস এ দুটিকে আঁকড়ে ধরো তবে কখনো তোমরা বিপথগামী হবে না। আমরা কতটুকু আঁকড়ে ধরতে পেরেছি বা ধরার চেষ্টা করেছি ।একবার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছি কখনো ।আমরা ভয় পাই নিজের বিবেকের সামনে নিজের চোখে চোখ রেখে নিজেকে প্রশ্ন করতে আমরা কি আসলে সত্যিকারের মানুষ সত্যিকারের মুসলমান সত্যিকারের নবীর উম্মত।

নিজের বিগত জীবনের আমলের কথা চিন্তা করে আয়নায় নিজেরা নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে যদি প্রশ্ন করি আমরা কতটুকু সত্যিকারের মানুষ কতটুকু আচরণ আমাদের মুসলমানের মত কতটা মার্কস নিজেকে নিজে দিতে পারব??

দুনিয়াবী পরীক্ষায় পরীক্ষা দেবার পরে পরীক্ষার খাতা রিভিশন দেয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু জীবনের পরীক্ষায় জীবন থেকে একটি সময় পার হয়ে গেলে সেখানে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। জীবন ফুলশয্যা নয় এটি একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র আমরা এখানে যে যত ভালো পারফরম্যান্স করতে পারবো আমাদের সিলেবাস আল কোরআন এবং হাদিস মোতাবেক আমরা আখিরাতে ততটাই সফল হব।



সারাদিন রাত আল্লাহর ইবাদত করলাম অথচ নিজের অন্তরের ঈমানকে খাঁটি না করে অন্যের মনে কষ্ট দেয়া অন্যকে ধোকা দেয়া প্রতারণা করা মিথ্যা কে জীবনে আশ্রয় দেয়া এগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারলাম না তাহলে.......!

ইবাদত তো করতেই হবে তবে সবচেয়ে বড় কাজ হল নিজের ইমান আকিদাকে সঠিক রাখা, খাঁটি করা।

আমরা অন্যকে অনেক সদোপদেশ দেই পরামর্শ দেই কিন্তু নিজেরা কতটুকু আমল করি। যখন প্রত্যেক আমি আমার নিজেকে সহীহ করব একজন খাঁটি মানুষ হিসেবে তৈরি করব তখন পৃথিবীটাই সুন্দর হয়ে যাবে।



প্রতিদিন আমরা যদি একটি করে হাদিস এবং একটি করে কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করি এবং তার উপর আমল করার চেষ্টা করি আমরা দেখব আমাদের জীবনটা আসলেই পবিত্র হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সে সময়টাই আমাদের নাই। আসলে আমাদের নিজেদের জন্য নিজেদের সময় নাই।

আমরা কোথায় ছুটছি কেন ছুটছি কিসের জন্য ছুটছি আমরা নিজেরাই জানিনা। শিশুকালে ছুটে চলি যৌবনের আশায়। যৌবনকালে ছুটে চলি যৌবনকে ধরে রাখার আশায়, কিন্তু তবুও আমরা বৃদ্ধ হয়ে যাই অথবা বৃদ্ধ হবার আগেই জীবন থেকে ঝরে পরি তাহলে কি লাভ.....? কিন্তু আমরা এই লাভ ক্ষতির হিসেব করি না আমাদের ছুটি চলতে হবে সেজন্য আমরা ছুটে চলি এটাই জীবন।


আল্লাহ আমাদের এ সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। মহাকাশ সূর্য চন্দ্র নক্ষত্র সকল কিছুই সৃষ্টি করেছেন। এত সুন্দর পৃথিবীতে সুন্দর পাহাড় সমুদ্র নদী ঝরনা গাছপালা ফুল ফল মানুষ পশুপাখি সকল কিছুই সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য শুধু সৃষ্টি করেননি তারা সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিয়েছেন পৃথিবীকে কিন্তু এ সকল কোন কিছুই মহান আল্লাহ উপভোগ করেন না তারা মানুষের জন্যই মানুষের প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মানুষের প্রয়োজন যেন মিটে না প্রয়োজন ফুরায় না কোন কিছুতেই। আমরা প্রতিটা মুহূর্তে শুধু চাই আর চাই। চাইতেই থাকি। আমাদের চাওয়ার কোন শেষ নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ শুধু চাইতেই থাকে ।। আর এই যে আমাদের এত চাওয়া এই প্রয়োজন চাওয়া গুলো মিটায় কে একমাত্র মহান আল্লাহতালা ব্যতীত আর কেউই নয়। অথচ আমরা নির্লজ্জের মত সে মহান আল্লাহর হুকুম অমান্য করছি। যে মহান পবিত্র সত্তা আমাদের সকল প্রয়োজন মিটান। আমরা সভ্য সমাজে বাস করি আমরা ভদ্রতা অসভ্যতা সামাজিক জীব বলে নিজেদেরকে আখ্যায়িত করি। অথচ বনের বন্যপ্রাণীরা যারা সভ্যতা ভদ্রতা এগুলো কিছুই বোঝেনা তারা মহান আল্লাহর কোন হুকুম অমান্য করে না। আর আমরা.... ধিক্কার জানাই নিজেকে ধিক্কার দেই নিজেদের কে ধিক্কার দেই পৃথিবীর সকল মানুষকে।



আমরা আজকে সকাল বেলা যদি এই নিয়ত করি যে আজকে সারাদিন আমরা এভাবে কাটাবো যেন আজকে আমার জীবনের শেষ দিন তাহলে আমার কিভাবে কাটাবো আজকের দিনটা?? খুব কঠিন প্রশ্ন তাই না?

সামনে আসছে পবিত্র মাহে রমজান মাস এ মাসে আমরা প্রথম থেকেই ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে প্রতিটা দিন শুরু করতে । আমাদের টার্গেট থাকবে সকালবেলা এবং রাতে বেলা কোরআন তেলাওয়াত করবো। প্রতিদিন তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার চেষ্টা করব ।হালকা জিকির তাসবিহ তাহলিল পাঠ করবো। আর সেই সাথে আপনারা গীবত হিংসা, মিথ্যাচার, অহংকার এসবকিছুই জীবন থেকে ডিলিট করে দিবো ইনশাল্লাহ তাআলা।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ