বন্ধ্যাত্ব



 আসসালামু আলাইকুম। আমার চেম্বারে মহিলা পেশেন্ট তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি কাঁদেন এবং তাদের স্বামীদের কে সবচেয়ে বেশি আপসেট হতে দেখি, যে বিষয়টি নিয়ে বলতে গিয়ে সেটা হলো বিয়ের অনেকদিন পরে ও সন্তানের মুখ না দেখা অর্থাৎ বন্ধ্যাত্ব।

একটি ছোট ঘটনা দিয়ে আমি আমার আজকের আলোচনার বিষয় শুরু করি ঘটনাটা হলো একদিন আমার চেম্বারে এক প্যাকেট মিষ্টি সহ একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে এক মহিলাকে খুশি খুশি মুখ নিয়ে ঢুকতে দেখে আমাকে অন্য একজন পেশেন্ট প্রশ্ন করলো- ম্যাডাম এরা কারা ?আমি বললাম বিয়ের অনেক বছর পরে আমার ওষুধ খাওয়াতে আল্লাহর রহমতে এই বাচ্চা কনসিভ হয়েছিল তাই তারই খুশিতে আমাকে মিষ্টিমুখ করাতে এসেছে! এ কথাটি শুনে আমার টেবিলের ওপাশে বসা মহিলাটি ঝর ঝর করে কেঁদে বললেন ম্যাডাম 10 বছর বিয়ে হয়েছে একটা সন্তানের মুখ দেখলাম না। উল্লেখ্য যে ঐ মহিলাটি আমার কাছে শ্বাসকষ্ট ও রিউমেটিক ফিভার এর চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেছিল। তাই ওই কথাটি উল্লেখ করে ওই পেশেন্ট বললেন যে আমার এতগুলো সমস্যা ছিল। আপনার ওষুধ খাওয়াতে  আমি সুস্থ হয়েছি। আমার বিশ্বাস, আপনি যদি আমাকে দয়া করে ওষুধ দেন তাহলে আমি ইনশাল্লাহ কনসিভ করব আমি সেদিন তার আবার নতুন করে কেস টেকিং করে তাকে কনসিভ হওয়ার জন্য  আল্লাহর উপর ভরসা করে মেডিসিন দিলাম। কোন জটিলতা মনে না হওয়াতে কোন মেডিকেল পরীক্ষা দেইনি। 20 /25 দিন পর তাকে দ্বিতীয় কোর্স ওষুধ দেয়ার পর দেড় মাস পরে ফোনে জানালেন তিনি consive করেছেন। সেদিন যে এমন একটা ভালো লাগে আমাকে ছুঁয়ে গিয়েছিল যে, আমি বারবার শুধু মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ! যাইহোক আমার আজকের আলোচনার বিষয় বন্ধ্যাত্ব আমি এই আলোচনাটিকে তিনটি পর্বে ভাগ করেছি 

প্রথম পর্ব: বন্ধ্যাত্ব মূলত কি? যদি কোনো দম্পতি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়াও একটানা প্রচেষ্টার এক বছর পরেও গর্ভধারণ করতে অক্ষম হন তবে সেটিকে বন্ধ্যাত্ব বলে। ৮-১৫% বিবাহিত দম্পতিরা এ সমস্যায় ভোগেন। বন্ধ্যাত্ব পুরুষ ও মহিলা উভয়ই হতে পারে। 

মহিলাদের যে সকল কারণে বন্ধ্যাত্ব আসে সেগুলো হলো- পেলভিক ইনফেকশন অথবা এমন কোন অপারেশন যা তার fertility কমিয়ে দিতে পারে। ovulation না হওয়া, uterus বা ফেলোপিয়ান টিউব এ কোন সমস্যা ,পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ। কিছু কিছু হরমোন যেমন প্রোল্যাকটিন থাইরয়েড হরমোন বা পিটুইটারি হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রা নিঃসরণ ওভুলেশন ব্যাহত করে। শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা কম হওয়া। প্রিমেচিউর ওভারিয়ান, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের কারণে ওভুলেশন ব্যাহত হতে পারে ।কেমোথেরাপি ,রেডিও থেরাপি সাময়িক বা পুরোপুরিভাবে ওভারি কে অকার্যকর করে দিতে পারে। ধূমপান বা মদ্যপান। 

PID , জরায়ু টিউমার ফাইব্রয়েড বা পলিপ। endometriosis. ইনফেকশন বা endometriosis জরায়ুর এবং এর আশেপাশে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক এ্যানাটমী নষ্ট করে বন্ধ্যাত্বের কারণ ঘটায় ।অথবা যে কোন ইনফেকশনের কারণে ডিম্বনালী বন্ধ হয়ে ,ovum  এবং sperm নিষিক্তকরণের পথ বন্ধ করে দিতে পারে।



Male বা পুরুষ ফ্যাক্টর: প্রতি 100 জনের মধ্যে 30 ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। স্পার্ম যথেষ্ট গতিশীল না হলে বা অস্বাভাবিক গঠনগত কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। কোন কারনে স্পার্ম তৈরিতে ব্যাহত হলে যেমন- জিন গত ত্রুটি, ভেরিকোসিল, টেস্টিস  এর টিউমার বা ইনফেকশন অথবা কোন ওষুধের সাইড ইফেক্ট এর কারনে নর্মাল স্পার্ম তৈরি বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।

পুরুষ এবং মহিলা উভয় ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের হার বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়।

চিকিৎসা: স্বামী এবং স্ত্রীর উভয়ের লক্ষণ ও কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে কি একজন দক্ষ অভিজ্ঞ চিকিৎসকের  চিকিৎসা ও পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন আপনাদের মঙ্গল কামনায়।

Dr. Khaleda Jahan Jenny

Bangladesh homoeopathic medical college and hospital.


মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ