ভুল চিকিৎসার করুণ পরিণতি (Dr Khaleda Jahan Jenny)




 আসসালামু আলাইকুম ।আমার আজকের এই পোস্ট টা হচ্ছে সে সকল অসাবধানী লোকদের জন্য যারা চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত গ্যাস্ট্রিক প্রবলেম এর জন্য মাসের-পর-মাস গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন এবং যারা জন্ডিসের symptoms শরীরে প্রকাশ পাওয়ার পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে বিভিন্ন কবিরাজ ঝাড়ফুঁক অথবা গাছ গাছান্তর ঔষধ সেবন করে থাকেন।

 মনে রাখবেন যখন আপনার শরীরের বারোটা বাজিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, তখন চিকিৎসকরা চিকিৎসা করার সুযোগ টুকুও পান না।। তারই একটা দৃষ্টান্ত দেয়ার জন্য আমি একটা ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করব। 

গত 24/ 12/21 তারিখ( মঙ্গলবার) আমার সিরাজগঞ্জের একজন পেশেন্ট ফোন দিয়ে আমাকে জানালেন আমাকে দেখাতে চান আমি তাকে জানালাম যে আমি তো আপাতত বগুড়া চেম্বার এ আছি আগামী শুক্রবার 27 তারিখে আমি সিরাজগঞ্জে রোগী দেখব। রোগীর মেয়ে (আমার পুরাতন পেশেন্ট) উনি আমাকে বললেন যে ম্যাডাম তিন দিন অপেক্ষা করা সম্ভব না আমার বাবার অবস্থা খুবই খারাপ। সিরাজগঞ্জ হাসপাতাল থেকে আমার বাবাকে ফেরত দেয়া হয়েছে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেছে । ম্যাডাম আপনি তো জানেন আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ এমতাবস্থায় আমার শেষ ভরসা আপনি ।আমি তখন আর কি করার বাধ্য হয়ে বললাম যে ঠিক আছে তাহলে আপনারা সিরাজগঞ্জ থেকে ওনাকে বগুড়া নিয়ে আসেন। উনারা মঙ্গলবার সকাল বেলা তাকে নিয়ে আসলেন আমার কাছে । পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারলাম রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। রোগীর বয়স আনুমানিক 60 হবে। বিলিরুবিনের মাত্রা খুবই বেশি, লিভার ক্যান্সার। সেই সাথে কিডনির অবস্থা ভালো নয় কিডনির ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা খুবই হাই। ডাক্তার না দেখিয়ে দীর্ঘদিন  আন্দাজে  গ্যাস্ট্রিক টেবলেট সহ কবিরাজি  বহু ঔষধ খেয়েছেে যার ফলশ্রুতিতে রোগী র শোচনীয় অবস্থা ।আমি এবং আমার হাসবেন্ড দুজন মিলে তাকে দেখার পরে রোগীর মেয়ের জামাতাকে ডেকে বললাম রোগীর অবস্থা বিশেষ ভালো নয় তবুও যখন আপনারা চাইছেন মেডিসিন দিলাম তবে অনেক দেরি করে ফেলেছেন। সেদিন মঙ্গলবার ওনাকে কিছু মেডিসিন দিয়ে শুক্রবার দেখা করতে বললাম সিরাজগঞ্জে। (আমি  সপ্তাহে' একদিন শুক্রবার সিরাজগঞ্জে রোগী দেখি) যাই হোক তারা শুক্রবার সকাল দশটায় আমাকে ফোন দিলেন আমাকে জানালেন রোগীর ব্যথা-বেদনা অনেকটাই কম রোগী মোটামুটি অনেকটা ভালো আছে দুপুরের দিকে এসে আমার সাথে আবার দেখা করবেন। আমি বললাম ঠিক আছে। তারপর সারাদিন রোগী দেখার কাজে আমি ব্যস্ত ছিলাম আমার আর ঠিক রোগীটার কথা মনে ছিল না কিন্তু রাত দশটার দিকে আমাকে রোগীর মেয়ের জামাতা ফোন দিয়ে জানালেন উনি মারা গিয়েছেন। আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে শুধু এটুকুই বললাম আসলে আমি চিকিৎসা করার সুযোগ পেলাম না। 

আমরা অহরহ রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়। এ ধরনের ঘটনার পেছনে অনেকাংশে দায়ী থাকে রোগীরা নিজে নিজেই। কারণ তারা যাচ্ছেতাইভাবে মনগড়া ট্রিটমেন্ট নেয় বিভিন্ন ডিস্পেন্সারি থেকে ওষুধ কিনে খায় ডাক্তার না দেখিয়ে অথবা কবিরাজি চিকিৎসা করেন। যার দরুন ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুগে থাকেন। 

আমি কিছু উদাহরণ দিচ্ছি

অনেক টিউমার ক্যান্সার পরিণত হয় ভুল চিকিৎসার কারণে। অথচ  তা কিনা সহজ ভাবেই সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে যেতে পারত।

অনেক ফিস্টুলা পরিণত হয় ক্যান্সারে ভুল চিকিৎসার কারণে অথচ রোগীটা যদি সঠিক চিকিৎসা পেত তাহলে একটু দীর্ঘদিন চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর সুস্থ হয়ে যেত।

অনেক সময় ভুল চিকিৎসার কারণে সামান্য ফোড়া থেকে নালীক্ষতে হতে পরিণত হয়ে যায়।

সাধারণ জ্বর থেকে পুরাতন জ্বর এ পরিণত হয়।

খাবারের অনিয়ম থেকে সাধারণ গ্যাস্ট্রিক থেকে গ্যাস্ট্রিক আলসারে পরিণত হতে পারে।

সাধারণ জন্ডিস থেকে লিভারের জটিল জটিল  ডিসঅর্ডার এমনকি লিভার ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।

সাধারণ প্রসাব ইনফেকশন থেকে কিডনি ইনফেকশন পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে পারে।

এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ আমাদের আশেপাশে অহরহ ঘটে থাকে শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে।


তাই আপনাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি যে আপনারা ভুল ভাল ভাবে আন্দাজে যে কোন ওষুধ কিনে খাবেন না ।অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করবেন ।সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন

Dr. Khaleda Jahan Jenny 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ