Psoriasis

 আসসালামু আলাইকুম আজ আমি আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব সেটা হচ্ছে সোরিয়াসিস।

এই  সোরাইসিস রোগী সম্পর্কে আলোচনা করার আগে আমি আপনাদের সামনে দুটি গল্প তুলে ধরব। যে গল্পগুলোর মাধ্যমে আপনারা এই  সোরাইসিস রোগীর সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।

এক

 বারিধারার এপার্টমেন্টে থাকা মিষ্টি নামের মেয়েটা আসলেই দেখতে খুব মিষ্টি। বাবা প্রফেসর সজীব চৌধুরী। বাবা মায়ের অত্যন্ত আদরের ভাইবোনদের মধ্যে সবার ছোট। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পরা অবস্থাতে তার বিয়ে ঠিক হলো এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শিল্পপতি  আমেরিকা প্রবাসী ছেলের সাথে তাদের এংগেজমেন্ট এর ডেট ঠিক হল আর মাত্র ১ মাস পরে কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল এক বিপত্তি ।মিষ্টির ঘাড়ে এবং কনুইয়ে তে এক ধরনের চুলকুনির মত। জায়গাটা কেমন যেন মোটা শক্ত হয়ে গেল চুলকালে কোন কস বের হতো না শুধুমাত্র খুশকি মত উঠতো। 

মিষ্টি খুব  স্মার্ট মেয়ে সে ইউটিউব ঘেঁটে বিভিন্ন  ভেসলিন পাউডার ইত্যাদি ব্যবহার করল ফলাফল আরো জটিল।

দ্রুত ভালো হয়ে যাওয়ার জন্য অনলাইনেও কিছু ক্রিম আনিয়ে ব্যবহার করল ফলাফল জিরো।

এরপর বাড়ির পাশে ওষুধের ডিসপেনসারি থেকে বিভিন্ন মলম ক্রিম আনিয়ে ব্যবহার করল তাতেও কোন লাভ হলো না। উপান্তর না পেয়ে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেল তখন ডাক্তার তাদের জানালেন এটা হচ্ছে সোরাইসিস। আর এটার জন্য দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হবে। ডাক্তার আরও বললেন যে বিভিন্ন রকমের আজেবাজে কসমেটিক্স না জেনে না বুঝে ব্যবহার করাতে বিষয়টা আরো জটিল হয়ে গিয়েছে!

ফ্যামিলির সবাই উশখুস করতে লাগলো এ কোন বিপদ হল বিয়েটা ভেঙে যাবে না তো...... এনগেজমেন্ট এর দিন যত এগিয়ে আসতে থাকলো ততোই সবার টেনশন বাড়তে থাকলো। কারণ এই ১৫/ ২০দিনেই রোগটা আরো প্রায় অনেকখানি ছড়িয়ে গিয়েছে। তাই এংগেজমেন্ট এর আগের দিন ছেলের বাবার সাথে মিষ্টির বাবা কথা বললে তারা মিষ্টি কে দেখতে চান। কিন্তু মিষ্টির ফর্সা ধবধবে ত্বকে এরকম  টকটকে লাল তার উপর দিয়ে খুশকির মত ছাল উঠে যাওয়া দেখে সবাই কিছুটা আঁতকে উঠলেন এবং বললেন এনগেজমেন্ট এর অনুষ্ঠানটা আপাতত কিছুদিনের জন্য cancel করে দেয়া হোক ।

এ ঘটনার পর পরিবারের সবাই আত্মীয়-স্বজন সবার সামনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেল।মিষ্টি খুবই হতাশ এবং মনমরা হয়ে গেল।

দুই

 বাড়ির মেজ বউ মিলি মাত্র তিন বছর হয়েছে বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে সে রূপে গুনে শ্বশুর বাড়ির সবার মন জয় করে ফেলেছে। তাদের কোলে ছোট্ট সুন্দর ফুটফুটে একটি ছেলে আছে। স্বামী স্ত্রীকে খুবই ভালোবাসে স্বামী পেশায় একজন কৃষি জীবি। কিছুদিন যাবত মীলার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি দেখা দেয়। দিনে রাতে খুব চুলকায়, দেখতে বিশ্রী রকমের। খুশকির মত কেমন ছাল ছাল ওঠে। কয়েক বার ডাক্তার দেখানো হলো। কিছুতেই কোন উপশম হলো না।

আস্তে আস্তে শরীরের তিনভাগে দুই ভাগ অংশ ছড়িয়ে গেল শরীরের ত্বক হয়ে গেল কদাকার। গ্রামের আশেপাশে সবাই কানাঘুষা করতে লাগলো না যেন কোন পাপ করেছে সে পাপের জন্য সারা শরীর বিশ্রী রকমের হয়েছে।

স্বামী খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল সে শহরে নিয়ে গিয়ে মিলিকে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ দেখালো ।চিকিৎসক তাকে জানালো এটা এক ধরনের মারাত্মক টাইপের সোরাইসিস। আর এটা কোন সংক্রামক রোগ নয়  বা ছোঁয়াচেও নয় দীর্ঘদিন চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। ডাক্তার বেশ কিছু মেডিসিন এবং মলম প্রেসক্রাইব করে দিলেন।

কিন্তু কিছুদিন পর যখন প্রতিবেশীর বিষয়টা জানতে পারল তখন তারা মিলিকে প্রায় এড়িয়ে চলতো। প্রতিবেশীদের আজেবাজে কথায় মিলির স্বামীর মনে হতে লাগলো তার ছেলে বা সে নিজে এ রোগের তার আক্রান্ত হবে না তো?? তাই তার স্বামী মিলিকে কিছুটা এড়িয়ে চলত এবং ছেলেকে মিলির কোলে বেশি দিতে চাইতো না। এতে মিলি হতাশায় ভুগতো এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল কখনো কখনো আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে চাইতো।

এ হচ্ছে সোরাইসিস রোগীদের বর্তমান সামাজিক চিত্র।


 সোরিয়াসিস একটি common disease .

 যা ত্বকের একটি প্রদাহজনিত রোগ ।নারী পুরুষ নির্বিশেষে যে কোন বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে ।এটা সংক্রামক রোগ নয়।

 কারণ: বংশগত কারণে, পরিবেশগত কারণে বৃদ্ধি পায়।

 কিছু কিছু ওষুধ সেবনের কারণে 

শীতে এ রোগ বৃদ্ধি পায় । 

লক্ষণ:ত্বক পুরু হয়ে যায় এবং লালচে দাগ পড়ে,  ত্বক চুলকায় অথবা ব্যথা হয়। আক্রান্ত অংশ রুপালি সাদা আশ দ্বারা আবৃত, উজ্জ্বল লালচে বর্ণের প্লাক বা ক্ষত দেখা যায়।

 জটিলতা: সোরিয়াসিস আর্থ্রাইটিস।

 সূত্রপাত :প্রাপ্ত বয়স্কদের।

 স্থিতিকাল: দীর্ঘমেয়াদি।

রোগীকে ধুলাবালি, অতিরিক্ত তাপএবং ঠান্ডা থেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে।

কড়া রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।

অতিরিক্ত লবণ এলার্জিযুক্ত খাদ্য এড়িয়ে চলা উচিত। ত্বকে সবসময় ভেজলিন ,অলিভ অয়েল ব্যবহার করে নরম রাখার চেষ্টা করতে  হবে।

ডায়াগনোসিস:  লক্ষণ দ্বারা এ রোগ নির্ণয় করা হয় । সাধারণত চিকিৎসকরা নিবিড় পর্যবেক্ষণ দ্বারা এই রোগ নির্ণয় করে থাকেন।

সংক্রমনের স্থান: সাধারণত কনুই, হাঁটু, মাথা, হাত ও পায়ের নখ আক্রান্ত হতে পারে । হাতের নখের রঙ নষ্ট হয়ে যায় এবং গর্ত হয়ে যায়।

এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর স্কিনের  সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় তাই রোগী অনেকটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এক্ষেত্রে রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে। এর রোগ টি অন্য কারো দেহে রোগী থেকে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই রোগীর প্রতি অবশ্যই সহনশীল মনোভাব থাকতে হবে। এ রোগটি ছোঁয়াচে নয়। তাই রোগীর প্রতি ঘৃণা দৃষ্টি দিয়ে নয় রোগীকে ভালোবাসার মনোভাব নিয়ে দেখুন।

হোমিও চিকিৎসা সেবা: সঠিকভাবে রোগীর কেস টেকিং নিয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা সদৃশ লক্ষণ সমৃদ্ধ ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এ এসকল রোগীরা ইনশাল্লাহ সুস্থ হতে পারেন। সম্ভাব্য  হোমিওওষুধ গুলো হচ্ছে Psorinum, Syphilinum, Sulphur, Carcinocin, Thuja ,Ars Alb, Mezerium Lachesis Bacilinum, Petroleum, Nat mur.ইত্যাদি।

পথ্যা পথ্য: 

সোরিয়াসিস রোগীর কোন খাদ্য বা খাদ্যাভ্যাস রোগীর ওপর প্রভাব ফেলে না। রোগীর পুষ্টিকর ও সুষম সহজপাচ্য খাদ্য গ্রহণ করাই উত্তম। প্রখর সরাসরি সূর্যালোক  রোগীকে এড়িয়ে চলতে হবে। পরিষ্কার পরিছন্নতা দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। 

সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন এই কামনায়

ডা: খালেদা জাহান জেনী

 ডক্টরস হোমিও ক্লিনিক।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ