Liver disease (Dr.Khaleda Jahan Jenny)

 জানেন কি মানুষের দেহে রসায়নের গবেষণাগার কাকে বলা হয়? 



লিভারকে দেহে রসায়নের গবেষণাগার বলা হয়  । কারণ লিভার দেহের কিছু জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। লিভারে উৎপন্ন হয়।  লিভার পিত্ত নামে পরিচিত একটি পদার্থ তৈরি করে। যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ও টক্সিন বের করে দেয় । এছাড়াও লিভার শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত পরিবহনে সাহায্য করে। যদি লিভারে কাজগুলি ভালোভাবে সম্পাদন করে তবে এটি স্বাস্থ্যকর। এসব কাজে কোন ব্যাঘাত ঘটলে লিভারে কিছু সমস্যা হতে পারে।পিত্তরস এক ধরনের ক্ষারীয় যৌগ যা পরিপাকের সহায়তা করে বিশেষত স্নেহ জাতীয় খাদ্যের ইমালসিফিকেশন এর জন্য পিত্তরস প্রয়োজন। 

লালচে খয়েরি রঙের আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় গ্ল্যান্ড হচ্ছে এই লিভার। ওজন দেহের মোট ওজনের 3-5% । প্রাণীদেহে বিপাকে ও অন্যান্য কিছু শারীরবৃত্তিয় কাজে যকৃত বা লিভার প্রধান ভূমিকা পালন করে।

বর্তমানে আমাদের আশেপাশে লিভার ডিজিজ আক্রান্ত রোগী সংখ্যা কেবল ক্রমশ বেড়েই চলছে । এর পিছনে আমরা নিজেরাই অনেকাংশে দায়ী আমাদের অনিয়মিত জীবন যাপন, অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার এবং কেমিক্যাল যুক্ত খাবার ।

লিভারের রোগের লক্ষণ তাৎক্ষণিকভাবে দেখা যায় না। লিভার ডিজিজের রোগ লক্ষণ গুলো  ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। তাই রোগী বা তার পরিবারের লোকজন বুঝতে পারে না যে রোগী লিভার ডিজিজ আক্রান্ত হয়েছে।

আমি আমার আজকে নিবন্ধে লিভারে রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

আগে আমরা জানবো লিভারের কি কি ধরনের রোগ হতে পারে। লিভারের যে যে ধরনের রোগ হয়ে থাকে সেগুলো হচ্ছে

  •  জন্ডিস
  • লিভার ক্যান্সার
  •  হেপাটাইটিস
  • হেপাটাইটিস এ
  • হেপাটাইটিস বি
  • হেপাটাইটিস সি
  • হেপাটাইটিস ডি
  • হেপাটাইটিস ই
  • লিভার সিরোসিস 
  • ফ্যাটি লিভার।
  •  লিভার ফুলে যাওয়া।
  •  লিভার ফেইলিওর ।
  • জেনেটিক্স।
  •  হেমোক্রোমাটোসিস
  •  উইলসনের রোগ ।
  • আলফা।
  •  পরজীবী এবং ভাইরাল সংক্রমণ অবস্থা।
  •  অটোইমিউন অবস্থা।
  •  অটো ইমিউন হেপাটাইটিস।
  •  প্রাথমিক বিলিয়ারি কোলানজাইটিস।
  •  ক্যান্সার এবং অন্যান্য বৃদ্ধি।
  •  লিভার ক্যান্সার।
  •  লিভার অ্যাডেনোমা।
  • পিত্তনালী ক্যান্সার । 
Liver disease এর কারণগুলো  হচ্ছে

  • দীর্ঘদিন নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহার করা।
  • অতিরিক্ত ভাজাপোড়া , জাঙ্ক ফুড,  ফাস্টফুডখাবার অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার।
  • অতিরিক্ত  ঝাল ও মসলা যুক্ত খাবার।


  •  দীর্ঘদিন কিছু ভেষজ পণ্য ব্যবহার করা ।
  • লিভারে চর্বি জমা ।
  • অত্যাধিক অ্যালকোহল পান।
  •  স্থূলতা।
  •  ডায়াবেটিস।
  •  ট্যাটু।
  •  অন্যের সাথে শেয়ার করে ইনজেকশন ব্যবহার করা।
  •  রক্তের সঠিক পরীক্ষা ছাড়াই রক্ত দেওয়া বা নেওয়া।
  •  সংক্রামিত ব্যক্তির শরীরের তরল এবং রক্তের এক্সপোজার।
  •  লিভার রোগের পারিবারিক ইতিহাস ।
  • রাসায়নিক যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা।
  • কেমিক্যাল যুক্ত পানীয় পান করা।
  • টক্সিন  বা রাসায়নিকের এক্সপোজার সহ ইত্যাদি কারণে liver disease হতে পারে।
বিভিন্ন রকমের লিভার লক্ষণ বা উপসর্গ ভিন্ন হতে পারে তবে লিভারের রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ গুলো হলো
  • শরীরের দুর্বলতা।
  •  চোখ এবং ত্বকের হলুদ হওয়া বা জন্ডিস।
  •  ক্লান্তি।
  •  পেটে ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া।
  •  পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া ।
  • ত্বকের চুলকানি।
  •  বমি বমি ভাব বা বমি ।
  • ক্ষুধামান্দ্য 
  • ফ্যাকাশে চামড়া। ফ্যাকাশে মলের রং।
  • প্রস্রাবের গাঢ় রং।
  • ক্ষত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া।
Diagnosis

লিভারে রোগ পরীক্ষা করার জন্য একজন ডাক্তার প্রথমে একটি সাধারণ পরীক্ষা পরিচালনা করেন যেখানে তিনি পূর্বের রোগীর ইতিহাস এবং লক্ষণগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন ।এগুলো ছাড়াও সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য  আরো কিছু পরীক্ষা আমরা করতে পারি যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে-
  • Blood test.
  • USG whole abdomen..
  • C.T scan.
  • Liver biopsy.
লিভার রোগের ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসা

নিম্নলিখিত জীবনধারা পরিবর্তন করে লিভার রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে-
  • অ্যালকোহল যুক্ত পানিও এড়িয়ে চলতে হবে।
  • ওষুধ এবং এলকোহল মিশ্রিত করবেন না।
  • কোন ভেষজ পরিপূরক গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন
  •  অন্য অসুস্থ ব্যক্তির রক্ত এবং অন্যান্য শরীরে তরলের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
  •  খাবার তৈরি এবং খাওয়ার আগে এবং পরে হাত ধুয়ে নিন
  •  দূষিত খাবার বা পানি খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
  •  নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  •  বিষাক্ত রাসায়নিকের এক্সপোজার এড়িয়ে চলুন।
  • সহজে হজম যোগ্য সুষম পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন।
  • অতিরিক্ত রৌদ্রতাপ এবং ঠান্ডা এড়িয়ে চলুন।
  • ফাস্টফুড জাঙ্ক ফুড স্ন্যাকস জাতীয় খাবার এবং ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুন।
  • খাদ্যে অতিরিক্ত মসলা ঝাল লবণ এবং বেশি মাত্রায় তেল ব্যবহার করবেন না।
  • তৈলাক্ত তো খাদ্য এড়িয়ে চলুন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ গ্রহণ করুন। গ্রাম্য কুসংস্কার এবং হাতুড়ে ডাক্তার থেকে দূরে থাকুন। লিভারের বিভিন্ন জটিল রোগে আধুনিক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বর্তমানে সফলতার সাথে সকল স্তরের জনসাধারণকে উন্নত সেবা দিয়ে আসছে।

লক্ষণ সাদৃশ্যপূর্ণ সঠিক হোমিও মেডিসিন ব্যবহার করলে রোগী সকল জটিলতা কাটিয়ে সুস্থ হবেন ইনশাল্লাহ।
নিজের এবং পরিবারের যত্ন নিন । সুস্থ থাকুন , ভালো থাকুন।

            Dr. Khaleda Jahan Jenny
Diploma of Homeopathic medicine and surgery
Bangladesh homoeopathic medical college and hospital.

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ