Ovarian cyst এর লক্ষণ ও চিকিৎসা (Dr. Khaleda Jahan Jenny)


বেশ কয়েক বছর আগে আমার কাছে একজন  ভদ্র মহিলা আসেন। তাকে আমার একজন পুরাতন পেশেন্ট আমার কাছে পাঠিয়েছিল। পেশেন্টের বাবা আমাকে হাত জোড় করে অনুরোধ করে বলেন যে, মা আমি দরিদ্র মানুষ এখন আপনি আমার শেষ ভরসা। আমার মেয়ের ওভারীতে সিষ্ট হয়েছে। ডাক্তার ক্যান্সার হসপিটাল রেফার করেছে । কিন্তু আমার হসপিটালে চিকিৎসা করার মত আর্থিক অবস্থা নেই। আমার মেয়ের জামাই বলেছে সুস্থ হলে তারপরে  বাড়িতে এসো। কারণ তার  নাকি চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেই। এখন উপরে আল্লাহ ,আর আপনি  আমার শেষ ভরসা। 
তো যাই হোক আমি রোগীর সকল লক্ষণ এবং রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম রোগীর অবস্থা বিশেষ ভালো না  সাথে প্রচন্ড পেটে ব্যথা । ঐদিন আমার প্রচন্ড রোগীর চাপ ছিল তবুও আমি বেশ অনেক সময় নিয়ে তাকে দেখলাম ও মেডিসিন দিয়ে দিলাম। বেশ কিছুদিন পর মহিলাটি আমার কাছে আবার আসলেন। জানালেন ব্যথাটা কিছুটা কমেছে। আমি পর্যায়ক্রমে তাকে মেডিসিন দিতে লাগলাম । সে নিয়মিত আমার ফলোআপ এ থাকলো। 
কিছুদিন পর  দেখলাম তার স্বামী তাকে আমার চেম্বারে নিয়ে এসেছে। এরপর থেকে দেখলাম তার স্বামী তাকে নিয়মিত আমার চেম্বারে নিয়ে আসতেন। এভাবে প্রায় এক বছর চিকিৎসা করা হলো ভদ্র  মহিলাটির। যখন দেখলাম মহিলাটি প্রায় সুস্থই আছেন আর তেমন কোনো অসুবিধা নেই তখন আমি আবার তাকে কিছু টেস্ট করতে দেই। দেখলাম রিপোর্ট আলহামদুলিল্লাহ ভালো সব নরমাল। সিস্ট আর নেই। আমি কনফার্ম হওয়ার জন্য আরেকটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠালাম সেখানেও রিপোর্ট নরমাল।
আল্লাহর অশেষ রহমতে এরকম হাজারো মানুষের  চিকিৎসার সফলতার পথে হেঁটেছে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকগণ মহাত্মা ডক্টর হ্যানিম্যানের দেখানো পথ ধরে।
আজকে আমি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব সেটি হচ্ছে ওভারিয়ান সিস্ট।


Ovary হলো female reproductive organ গুলোর  মধ্যে অন্যতম। ছোট ছোট cyst একটি বা তার অধিক ওভারি কে ঘিরে রাখে এই cyst এর জন্য ovary এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। অনিমিত সেক্স লাইফ, হরমোনাল প্রবলেম ইত্যাদি কারণে ovarian cyst এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সহজ বাংলায় বলতে গেলে ওভারির মধ্যে যখন বিভিন্ন কারণে পানি জমে অথবা পানির থলির মত তৈরি হয় সেটি কি আমরা বলি ovarian cyst.

Ovarian cyst এর বয়সের সময়সীমা:

Ovarian cyst এর কোন বয়স সময় সীমা নেই। 
পিউবার্টির আগেও কিন্তু মেয়েরা  ovarian cyst এর সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসে অর্থাৎ বয়সন্ধিকালের আগেও হতে পারে।
 আবার মেনোপজের পরেও মহিলাদের যখন মাসিক একদম বন্ধ হয়ে যায় তাদের ও cyst ফর্মেশন হতে পারে।

Ovarian cyst এর উপসর্গ:

অনেক ক্ষেত্রে রোগীর কোন  লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অনেক সময়  আবার কিছু কিছু রোগীর  লক্ষণ প্রকাশ পায় যেমন 
অনিয়মিত ঋতুস্রাব ।
মাসিকের সময় মারাত্মক ব্যথা তলপেট ফুলে যাওয়া ।
প্রস্রাবের সমস্যা 
তলপেটে ব্যথা 
বমি ভাব কিংবা বমি ।
সিষ্টের ইনফেকশন 
প্রস্রাবে ইনফেকশন 
ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে 
এছাড়া পেট ফাঁপা বুক জ্বালাপোড়াও থাকতে পারে ।
এই রোগ হলে পিঠে চাপ পড়ে এবং তা থেকে ব্যথার সৃষ্টি হয়। কখনো কখনোও উরুতেও ব্যথা অনুভব হয়।

Ovarian cyst  এর কারণ :

অনেক কারণেই হতে পারে যেমন
 অতিরিক্ত ওজন
 হরমোন জনিত কারণ
 বংশগত কারণ 
ওভারি ক্যান্সার 
ব্রেস্ট ক্যান্সার 
খাদ্যনালীর ক্যান্সার 
বিশেষ করে বিআরসিএ জিন যাদের থাকে তাদের সমস্যা হতে পারে বিভিন্ন মেডিসিনের সাইড ইফেক্ট। অনিয়মিত জীবন যাপন।
 অনিমিত সেক্স লাইফ।
অধিক বয়সে বিয়ে করা
অনেক দেরিতে বাচ্চা নেওয়া

Diagnosis :

1. U. S G.   Lower Abdomen 
2. C T scan
3.MRI  
4. Hormone test
আবার কিছু টিউমার মার্কার দিয়েও রোগ নির্ণয় করা হয় যে রোগীর সিস্ট ক্যান্সার টাইপের কিনা যেমন CA 125.

Ovarian cyst এর চিকিৎসা ও পরামর্শ

বর্তমানে হোমিওপ্যাথি  আদর্শ ও‌ আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত একটি চিকিৎসা বিজ্ঞান। যে চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বয়ং ইংল্যান্ডের রাজ পরিবারেও সমাদৃত। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান বর্তমানে অনেক সার্জিকাল কেস আছে  যা কিনা শুধুমাত্র লক্ষণ  সাদৃশ্যে হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন প্রয়োগ করে পুরোপুরি আরোগ্য করতে সক্ষম, আলহামদুলিল্লাহ। ওভারিয়ান সিস্ট মহিলাদের একটি কমন সমস্যা। তেমনি ভাবে Ovarian cyst আক্রান্ত রোগীকে যদি  নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করে লক্ষণ সাদৃশ্যপূর্ণ সঠিক হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন প্রয়োগ করা হয়। তবে অত্যন্ত সফলতার সাথে রোগীর ওভারিয়ান সিস্ট আরোগ্য করা সম্ভব ইনশাআল্লাহ। 
রোগীকে মেডিসিন সেবন করার পাশাপাশি যে সকল পরামর্শ মেনে চলতে হবে সেগুলো হল---
শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার ফলে শরীরের হরমোনাল ব্যালেন্স নষ্ট হয়। এক্সারসাইজ এবং সুষম ডায়েট এ রোগ থেকে রেহাই দিতে পারে । রোজ সকালে ২০ মিনিট জোরে হাঁটা বা জগিং করা যেতে পারে । সাইক্লিং করতে পারেন। সাঁতারও খুব ভালো এক্সারসাইজ এর সঙ্গে ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম যোগ করে নিন শরীরচর্চার তালিকায়।
যোগাসনও এই অসুখ সারাতে কার্যকর। তার সাথে চাই নিজেদের কে অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন থেকে বিরত রাখা খাওয়া-দাওয়ার ব্যালেন্স করা জরুরি। ঘুমের সাইকেল যেন ঠিক থাকে। বাইরের খাবার এবং ভাজাপোড়া খাবার এভয়েড করতে হবে। অতিরিক্ত তেল চর্বিযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুন।
 নিজেকে ভালোবাসুন , সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।

Dr. Khaleda Jahan Jenny

Bangladesh homoeopathic medical college and hospital  (Dhaka).

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ